প্রধান কার্যালয়: ৫৮/১- পুরানা পল্টন (২য় তলা), ঢাকা-১০০০।
গভ: রেজি:- নং-সি-১৯৬৯৯৯/২০২৪
ফোন:- 02224458547
ই-মেইল- [email protected]
রংপুরের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা হলো নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) কর্তৃক জোরপূর্বক প্রিপেইড মিটার স্থাপন। গ্রাহকদের অভিযোগ, কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই মিটার স্থাপন করা হচ্ছে এবং প্রতিবাদ জানালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন এই বিষয়ে লাগাতার আন্দোলন করলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
রংপুর নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায়, যেমন মহন্ত পাড়া, রামপুরা, মধ্য রামপুরা, মতিনের মোর, পার্বতীপুর, শতরঞ্জি পাড়া এবং গুদরিবাজারে অন্তত দেড় হাজার বাড়িতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ বাড়ি টিনশেড ও আধাপাকা হওয়া সত্ত্বেও পুরাতন মিটার সরিয়ে নতুন মিটার স্থাপন করা হয়েছে কোনো নোটিশ ছাড়াই।
গ্রাহকদের অভিযোগ, তারা মিটার পরিবর্তনের বিষয়ে অস্বীকৃতি জানালেও নেসকো কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক নতুন মিটার স্থাপন করছে। এর ফলে তারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, মধ্য রামপুরা এলাকার বাসিন্দা নাছরিন বেগম জানান, তিনি ৫ জানুয়ারির পর দুই দফায় এক হাজার টাকা রিচার্জ করেও ১২ জানুয়ারি তার ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি ইমারজেন্সি রিচার্জে বিদ্যুৎ চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে, রামপুরা মহন্ত পাড়ার বাসিন্দা প্রভাত মহন্ত বলেন, "৫ জানুয়ারি আমাদের পাড়ায় নতুন মিটার নিয়ে আসলে আমি নিষেধ করলেও তারা জোর করে মিটার লাগিয়ে দেয়।" মুক্তা মহন্ত একই এলাকার বাসিন্দা, তিনি জানান, "নতুন মিটার লাগানোর পর বিদ্যুৎ না থাকলে আমরা বিদ্যুৎ অফিসে যাই। পুরাতন মিটার পুনরায় লাগানোর কথা বললে অফিসের কর্মকর্তারা বলেন, 'এখন ওই মিটার খুললে আমাদের নামে মামলা করা হবে।'"
পার্বতীপুর এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম জানান, "বিদ্যুৎ অফিস প্রথমে টিনশেড ও আধাপাকা বাড়িগুলোকে টার্গেট করে প্রিপেইড মিটার লাগাচ্ছে। বেশিরভাগ পুরুষ কর্মক্ষেত্রে থাকায় মহিলাদের দিয়ে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে মিটার লাগানো হচ্ছে।" মতিনের মোর এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, "যদি আমরা প্রিপেইড মিটার লাগাতে না চাই, তাহলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন বলেন, পরবর্তীতে এই মিটার ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করলেও পাওয়া যাবে না।"
এদিকে, অতিরিক্ত দাম, রিচার্জে সমস্যা, হিডেন চার্জসহ বিভিন্ন অসুবিধার কথা জানিয়ে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবিতে গেল এক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। রংপুর বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন জানান, "এই প্রিপেইড মিটার অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ার পরও গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার বাবদ ১৬ বছর পর্যন্ত প্রতি রিচার্জে ৪০ টাকা করে কাটবে নেসকো।"
তিনি আরও বলেন, "কোনো প্রিপেইড মিটার রংপুরে স্থাপন করতে দেয়া হবে না।" একইসাথে যেগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলোও সাত দিনের মধ্যে অপসারণের দাবি জানান তিনি। দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেন গ্রাহক ফোরামের এই নেতা।
রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, "বিদ্যুৎ বিভাগ যদি জবরদস্তিমূলকভাবে এই মিটার লাগায় তাহলে গণপ্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে তাদের।" বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করেই সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, "সাধারণ মানুষ নিতে না চাইলে প্রিপেইড মিটার জোর করে চাপায় দেয়া ঠিক হবে না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নেসকো কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
প্রিপেইড মিটারের অসুবিধাসমূহের মধ্যে রয়েছে:
1. প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে, কারণ গ্রাহকের ডিমান্ড চার্জ, এনার্জি চার্জ, মিটারের ভাড়া এবং ভ্যাট ইত্যাদি বিলের সাথে যুক্ত হয়ে রিচার্জের সাথে কেটে নেয়।
2. বিদ্যুতের ওভারলোডের কারণে অনেক সময় বিদ্যুৎ প্রবাহ আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে যায়।
3. ওভারলোড নিতে পারে না বলে, বিভিন্ন বড় অফিস বা কারখানায় এটি ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি।
4. ১৬ বছর পর্যন্ত প্রতি রিচার্জে গ্রাহকদের মিটার বাবদ ৪০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
5. সার্ভার ডাউন হলে গ্রাহকদের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
নিউজের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য স্ক্যান করুন